পদার্থের অবস্থা ও তাদের পরিবর্তন

পদার্থ: যার ভর আছে, যা স্থান দখল করে অবস্থান করে তাকে পদার্থ বলে।
পদার্থের অবস্থাভেদ : পদার্থ তিনটি অবস্থায় থাকতে পারে। যথা: কঠিন, তরল ও বায়বীয়। তাপ পদার্থের তিন অবস্থায় রূপান্তরের কারণ। পানি একমাত্র পদার্থ যা প্রকৃতিতে কঠিন (বরফ), তরল (পানি) এবং বায়বীয় (জলীয় বাষ্প) তিনটি অবস্থাতেই পাওয়া যায়।
কঠিন পদার্থ : কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন এবং দৃঢ়তা আছে। আর অণূসমূহ পরস্পরের অতি সন্নিনিকটে অবস্থান করে। যেমন: বালু, পাথর, লবণ।
তরল পদার্থ :  তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। তরল পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিনিকটে থাকে, তবে তাদের মধ্যকার আকর্ষণ কঠিন পদার্থের মত প্রবল নয়। উদাহরণ: পানি, কেরোসিন।
বায়বীয় পদার্থ : বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই। বায়বীয় পদার্থের অনুসমূহের দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম। ফলে তারা মুক্তভাবে চলাচল করে। উদাহরণ: নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, মিথেন।
গলনাংক : যে অবস্থায় কোন পদার্থ কঠিন পদার্থ হতে তরল অবস্থায় পরিণত হয়, তাকে সে পদার্থের গলনাংক বলে। পানির গলনাংক ০ সেন্টিগ্রেড।
স্ফুটনাংক : যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থ ফুটতে থাকে, তাকে সে পদার্থের স্ফুটনাংক বলে। পানির স্ফুটনাংক ১০০ সেন্টিগ্রেড।
উর্ধ্বপাতন : কোন কোন ক্ষেত্রে কঠিন পদার্থকে উত্তপ্ত করলে তা তরলে রূপান্তরিত হয়, এই প্রক্রিয়াকে উর্ধ্বপাতন বলে। যেমন: কর্পুর, গন্ধক, আয়োডিন, ন্যাপথালিন, নিশাদল, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্সেনিক, বেনজয়িক এসিড ইত্যাদি।
পদার্থের শ্রেণীবিভাগ : পদার্থকে ২ টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- (১) মিশ্রণ ও (২) খাটি বস্তু।
মিশ্রণ : দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোন অনুপাতে একত্রে মিশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে, তবে উক্ত সমাবেশকে মিশ্রণ বলে। বায়ু একটি মিশ্র পদার্থ।
খাটিঁ বস্তু : খাটি বস্তু ২ভাগে বিভক্ত যথা- (ক) মৌল ও (২) যৌগ।
(ক) মৌল বা মৌলিক পদার্থ : যে পদার্থকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে অন্য কোন সহজ বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন: হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, সোনা, তামা। পৃথিবীতে বর্তমানে মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ১১৮ টি। এদের মধ্যে ৯৮ টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। কৃত্রিম উপায়ে প্রাপ্ত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ২০ টি।
(খ) যৌগ বা যৌগিক পদার্থ : যে বস্তুকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে যৌগ বা যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন : পানি।
পদার্থের পরিবর্তন : পদার্থের পরিবর্তন দুই ধরণের। যথা- (১) ভৌত বা অবস্থাগত পরিবর্তন (২) রাসায়নিক পরিবর্তন।
(১) ভৌত বা অবস্থাগত পরিবর্তন : যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু নতুন কোন পদার্থে পরিনত হয় না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। যেমন: পানিকে ঠান্ডা করে বরফে এবং তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত করা, একটি লোহার টুকরাকে ঘর্ষণ করে চুম্বকে পরিণত করা ও তাপ দিয়ে মোম গলানো।
(২) রাসায়নিক পরিবর্তন : যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক নতুন বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন: লোহায় মরিচা ধরা, দুধকে ছানায় পরিণত করা, চাল সিদ্ধ করে ভাতে পরিণত করা ও দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বলানো।

  • যার ভর অাছে, জায়গা দখল করে এবং জড়তা অাছে তাই – পদার্থ।
  • পদার্থের অবস্থা – ৩ টি। যথা : কঠিন, তরল ও বায়বীয়।
  • পদার্থ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা : মিশ্রণ ও খাটি বস্তু।
  • মিশ্রণ দুই প্রকার। যথা : সমসত্ব ও অসমসত্ব।
  • খাটি বস্তু দুই প্রকার। যথা: মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ।
  • মৌলিক পদার্থ চার প্রকার। যথা : ধাতু, উপধাতু, অধাতু ও নিষ্ক্রিয় মৌল।
  • যৌগিক পদার্থ দুই প্রকার। যথা : জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগ।
  • যে সকল বস্তুকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করে অন্য কোন সহজ বস্তুতে রুপান্তরিত করা যায় না, তাকে বলে – মৌলিক পদার্থ।
  • এ পর্যন্ত অাবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা – ১১৮ টি।
  • যে সকল বস্তুককে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক পদার্থ পাওয়া যায় তাকে বলে – যৌগিক পদার্থ।
  • যে সব মৌল কখনো ধাতু কখনো অধাতুর ন্যায় ন্যায় অাচারণ করে তাকে বলে – উপধাতু। যেমন : অার্সেনিক, বোরন, সিলিকন।
  • তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী মৌলকে বলে – ধাতু।
  • যেসব মৌল প্রধানত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাদের বলে – অধাতু।
  • দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোনো অনুপাতে মিশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে, তবে উক্ত সমাবেশকে বলে – মিশ্রণ।
  • বায়ু একটি – মিশ্র পদার্থ।
  • সবচেয়ে হালকা গ্যাস – হাইড্রোজেন।
  • সবচেয়ে ভারী পদার্থ – তরল মারকারি বা পারদ।
  • পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি – ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • যেসব কঠিন পদার্থ উত্তপ্ত করলে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় তাকে বলে – উর্ধ্বপাতিত/উদ্বায়ী পদার্থ। যেমন : অায়োডিন, কর্পূর, নিশাদল।
  • পদার্থের পরিবর্তন – দুই প্রকার। যথা: ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তন।
  • ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ :

➺ লোহাকে চুম্বকে পরিণত করা।
➺ চিনিকে পানিকে দ্রবীভূত করা।
➺ কঠিন মোমকে তাপে গলানো।
➺ বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালানো।
➺ পানিকে ঠান্ডা বরফে পরিণত করা।
➺ পানিকে তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত করা।

  • রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ :

➺ লোহায় মরিচা পড়া
➺ দুধকে ছানায় পরিণত করা
➺ মোমবাতির দহন
➺ দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো
➺ গাছের পাতায় খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া

  • নির্দিষ্ট চাপে কোন কঠিন পদার্থ যে তাপমাত্রায় গলতে শুরু করে সে তাপমাত্রাকে বলে ঐ পদার্থের – গলনাংক।
  • নির্দিষ্ট চাপে কোন তরল পদার্থ যে তাপমাত্রায় জমতে শুরু করে সে তাপমাত্রাকে বলে ঐ পদার্থের হিমাংক।
  • নির্দিষ্ট চাপে কোনো তরল পদার্থ যে তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হতে থাকে সে তাপমাত্রাকে বলে ঐ পদার্থের -স্ফুটনাংক।
  • চাপ বৃদ্ধি পেলে স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পায়, চাপ কমলে – স্ফুটনাংক কমে।
  • যে তাপে বস্তুর তাপমাত্রার পরিবর্তন না ঘটিয়ে শুধু অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় সে তাপকে বলে – সুপ্ততাপ।
  • গলনাংক, স্ফুটনাংক এবং ঘনত্ব হলো – পদার্থের ভৌত ধর্ম।